শূন্যদর্শন
শূন্যদর্শন বিশেষ কোনো মতাদর্শের আধুনিকীকরণ নয়-স্বতন্ত্র ধারায় বিবিক্তচিত্তে সে তার অস্তিত্বকে জানান দেয়, ধর্ম ও বিজ্ঞানের রাহুগ্রাস থেকে বের হয়ে আসার একপ্রকার তাগিদ—যা রূপকথার অন্নজলকামে টানে না, আবার বিজ্ঞানের ‘আধুনিক মানুষ’ও হতে চায় না;
বরং চিরায়ত বাংলার লোকজ মরমি-সন্দর্শনে বাঁশি বাজিয়ে গান শুনিয়ে পরম আপন হতে চায়, এই সহজ চাওয়া এবং সহজ হয়ে ওঠা-দু’য়ের সেতুবন্ধনে নতুন ভাবনার স্বপ্নাধিকারে নিয়ে যায়; মনে করে এরই মধ্যে জগতের পুণ্য ও প্রাপ্তি, সেই সহজ মানুষের সন্ধানে শূন্যদর্শন।
শূন্য থেকে আসি, শূন্যে মিলে যাই। ‘জন্মিলে মরিতে হবে’-অর্থে ব্যবহারবিধি পেলেও, গূঢ়ার্থে এর মর্ম উদ্ধার জরুরি। আসা-যাওয়ার এই যে পৃথিবী-রীতি তা থেকে আমরা মুক্ত নই। মুক্ত নই চিন্তার স্বাধীনতা থেকেও।
সে কারণে জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী অঞ্চল আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। এ অঞ্চলের বিস্তৃতি ও বিকাশ, নির্বাণ ও নির্মিতিতে শূন্যের স্থিতি বিরাজমান। বেঁচে থাকার সঙ্গেই শূন্যের সম্পর্ক, আছি অর্থই শূন্য, নাই অর্থই না-শূন্য। তাহলে ছোট-বড় এইসব অসংখ্য অযুত শূন্য সম্পর্কে অল্প করে হলেও জানা থাকা দরকার।
জানা দরকার, মস্তিষ্কের ব্যবহার ও প্রয়োগরীতি সম্পর্কেও-যা কোনোভাবেই সীমাবদ্ধতা নয়, বিস্তারের স্বরূপযাত্রায় সবিবেচিত। বিস্তার বিকাশে স্বপ্রাণায়াম। প্রাণের অস্তিত্বের সঙ্গে শূন্যের যেমন সম্পর্ক, প্রাণপাতেও শূন্যের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না। তখনই বিশেষভাবে লক্ষ করার বিষয় এবং প্রশ্ন ওঠে-শূন্যমুক্ত হওয়া যায় কি? উত্তরও শূন্য, কারণ শূন্যের উত্তরের সমাধান শূন্যতেই।
সে-কারণে শূন্যমুক্তির জায়গায় খত, শূন্যযুক্তির জায়গায় সৎ। অর্থাৎ শূন্য থেকে মুক্তি নেই, জন্মেই যেখানে শূন্যের যুক্ততা ও প্রকাশ যুক্ত হয় এবং সৃষ্টির রূপারূপগ্রাহ্যতা তৈরি করে, সেখানে সমগ্র জীবন একটি শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে যায়—যা পৃথিবীকাল বা জগৎধ্বংসকাল পর্যন্ত টেকসই রূপ পায়, অর্থাৎ মজবুত কাঠামোয় দাঁড়িয়ে যায়। মিশরের পিরামিড, সুউচ্চ দালান, প্রকৃতি ও উল্লিখিত প্রশ্নসমগ্র সৃষ্টিজগৎ, বৃহদার্থে সৌরমণ্ডলী কি শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে নয়? উত্তর-হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ।
অর্থান্তরে শূন্য দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বা টিকে থাকছে পুরো পৃথিবী, প্রকৃতি ও মানুষ এবং সৃষ্টিবিস্ময় সমগ্র সৌরজগৎ। ধরা হয়, ভারতবর্ষে শূন্যতত্ত্বের উদ্ভব ও বিকাশ। কিন্তু চর্চার অভাবে আজ তা প্রায় দূর-পরিচিত। অনাত্মীয় হয়ে পড়ছে দিনে দিনে। ভেতর থেকে শূন্যের সেই শক্তিকে জাগিয়ে তোলা তথা আত্মদর্শনই শূন্যদর্শন এবং শূন্যতত্ত্বের মূল কথা।
অর্থাৎ পৃথিবীজীবনের মানুষযাত্রাই শূন্যতত্ত্বের প্রকৃত দর্শন, যেখানে সুখ-শান্তি, সুন্দর ও কল্যাণের বিষয়াবলি সম্পর্কিত। ব্যাখ্যা-বিস্তৃতিতে, ছোটখাটো উদাহরণ-রীতিতে, মনে নেয়ার সংস্কৃতিতে হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা হলো শুরু, এবার হাঁটতে থাকুন, কত বছর হেঁটেছেন, আর কত বছর হাঁটবেন, প্রশ্ন করুন নিজেকেই, উত্তর নিশ্চয়ই মিলবে শূন্যদর্শনে।
কবি ও গবেষক আহমেদ ফিরোজ-এর গবেষণালব্ধ অনন্য একটি দর্শন গ্রন্থ শূন্যদর্শন। বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত এ গ্রন্থ মানুষের শূন্যযাত্রাকে আপ্লুত করবে, চিন্তার বহুবিস্তৃত যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আরো বহুদূর…
শূন্যদর্শন : আহমেদ ফিরোজ। বিষয় : প্রবন্ধ-গবেষণা (পরিবর্ধিত ২য় সংস্করণ) । প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা। প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০১১, ১ম প্রকাশ : বইমেলা ২০০৫ (শূন্য প্রকাশন)। প্রকাশক : মিজান পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা : ১১২। মূল্য : ১৩৫ টাকা। আইএসবিএন : 9789848614297
Shunnodarshon (Beginning Philosophy, 2nd edition) by Ahmed Firoze. Print: Ekushey Book Fair 2011, Dhaka, Bangladesh. Subject: Research & Article. Cover Artist: Sabyasachi Hazra. Publisher: Mizan Publishers. Number of Pages: 112. Price: 135 taka. ISBN: 9789848614297
সূত্র : http://rokomari.com/book/17878
Facebook Page : https://www.facebook.com/BeginningPhilosophy